বিপ্লবের জন্য

-হুসনী মোবারক

জীবনের গান তোমার শ্রবনেন্দ্রীয়কে
স্পর্শ করবেনা জানি, তবু
দিন বদলের একটি গান; নাহোক
একটি কলি অন্তত শুনে যাও
তুমিই হবে হয়তো অনিবার্য একটি বিপ্লবের নায়ক।

পরিবর্তনের কবিতা তোমার মর্মকে
ছুঁয়ে দিতে পারবেনা জানি, তবু
পালাবদলের একটি কবিতা; নাহোক
একটি পংক্তি অন্তত পড়ে দেখ
হয়তো তোমারই ডাক পড়বে আবশ্যম্ভাবী সেই বিপ্লবের নিশান উড়াতে।

বিপ্লবের ইতিহাস তোমার টনককে
নাড়া দিবেনা এ-ও জানি, তবু
বিপরিত স্রোতের সব ইতিহাস; নাহোক
একটি অধ্যায় অন্তত হাতে রাখ
তোমাকেই হয়তো প্রয়োজন হবে সন্দেহাতীত সেই বিপ্লবের অগ্রসেনা হিসেবে।

খুনের আটলান্টিক দরিয়া তোমার ঘুমন্ত আত্মাকে
জাগিয়ে তুলবেনা জানি, তবু
জেরুজালেম, কান্দাহার, বাগদাদের সব, নাহোক
একটি ছেলে হারা মায়ের আহাজারি অন্তত দেখে যাও
হয়তো তোমাকেই ডাকা হবে অবিশ্বাসের ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে শাশ্বত আহবান জানাতে।।

২১/১০/২০০৫

বৃথা সব

-হুসনী মোবারক

একেলা এই বকুল তটে
বসে আছি সকাল হতে
সন্ধানী দুই চক্ষু মেলে
সেই মেয়েটি আসবে বলে
দেখিই না সে আসে কিনা
আমায় ভালবাসে কিনা।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো
টাক ফাটা রোদ মাথায় এলো
ক্লান্ত শরীর অবসাদে
এলিয়ে দিলাম বেঞ্চিটাতে
মাথার নীচে দু’হাত রেখে
ঘুমের কোলে যাই হারিয়ে।

নাকের ডগায় পড়লোটা কি?
ধড়ফড়িয়ে উঠলাম আমি
কেমন যেন এক গন্ধ লাগে
তাকিয়ে দেখি বৃক্ষটাতে
নাক বরাবর শুকনো ডালে
কাকের পাখা হাওয়ায় দোলে।

দুপুর শেষে বিকেল হলো
তারপরেতে সন্ধ্যে এলো
এক পশলা বৃষ্টি হলো
দুঃখ গুলো ধুয়ে নিল
ধীরে ধীরে হাটতে হাটতে
রাস্তা ধরি বাড়ির পথে।

২৯/৬/২০০২

লিখব প্রাণ খুলে…হাত খুলে

প্রতিটি মানুষ প্রতিভাবান। প্রত্যেককেই কিছু না কিছু করার ক্ষমতা দিয়েই সৃষ্টিকর্তা আমাদের এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। কেও তার প্রতিভাকে কাজে লাগাতে পারে…কেও বা ব্যর্থ হয়। ব্যর্থতার জন্য কারো ক্ষেত্রে দায়ী সে নিজেই…আবার কেওবা ব্যর্থ হয় প্রতিভা বিকশিত করার উপযুক্ত ক্ষেত্র পাওয়ার অভাবে। সাহিত্য প্রতিভা আমাদের অনেকের মধ্যেই আছে। আমরা সবাই কম-বেশী দু-এক কলম লিখতে পারি। জীবনে ২/১ পংক্তি ছড়া-কবিতা লিখেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুষ্কিল। লিখতে লিখতেই অখ্যাত থেকে বড় বড় কবি-সাহিত্যিকের জন্ম। আবার অনেকেই দু-একবার লিখে হাল ছেড়ে দেয়। কিন্তু আমরা প্রায় সবাই জানি ” হাজার মাইলের পথচলা শুরু হয় একটি মাত্র পদক্ষেপ দিয়ে”, আমরা সেই কবিতাটিও পড়েছি
” পারিব না এ কথাটি বলিও না আর,
একবার না পারিলে দেখ শতবার।”
তারপরও আমরা ভুলে যাই…হাল ছেড়ে দেই। আর হাল ছাড়বো না। আমাদের যে প্রতিভাই আছে…সেটা সৃষ্টিকর্তার উপহার। সৃষ্টিকর্তার উপহারকে অযত্নে নষ্ট করা উচিৎ হবে না। সৃষ্টিকর্তার উপহার প্রতিভাকে অন্য কেও এসে বিকশিত করে দিবে না, নিজের প্রতিভা বিকাশের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে অন্যরা আপনার কাজে সহযোগিতা না করলেও পিছনে সমালোচনা অবশ্যই করবে-
“ করিতে পারিনা কোন কাজ
সদা ভয়, সদা লাজ
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে
পাছে লোকে কিছু বলে”।
আমরা “পাছে লোকে কিছু বলে” এই ভয়ে প্রায় সবারই কোন কাজে নামা হয় না। কিন্তু কবি আমাদেরকে উৎসাহ দিয়ে প্রশ্ন করেছেনঃ
“কাটা হেরি ক্ষ্যান্ত কেন কমল তুলিতে,
দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহিতে?
এই ব্লগ সেই সকল প্রতিভাবানদের প্রতিভা বিকশিত করার ক্ষেত্র। সুতরাং, আজ থেকে আমরা লিখব প্রাণ খুলে…হাত খুলে।

“আমাদের গল্প-কবিতা”য় লেখা পাঠানোর নিয়মাবলী

১। লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ shewlimala@gmail.com
২। নিজের লেখা ছড়া, কবিতা, গল্প, ভ্রমন কাহিনী, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি পাঠানো যাবে এবং মান-সম্মত হলে তা প্রকাশ করা হবে।
৩। লেখার উপরে অবশ্যই বিভাগ (ছড়া/কবিতা/গল্প) লিখতে হবে।
৪। অবশ্যই লেখার শিরোনাম এবং লেখকের নাম থাকতে হবে।
৫। কোন অবস্থাতেই অন্যের লেখা নিজের নামে চালিয়ে দেয়া যাবেনা। কপি পেস্ট গ্রহনযোগ্য নয়। প্রয়োজনে রেফারেন্স হিসেবে অন্যের লেখা ব্যবহার করা যাবে, তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই উৎস উল্লেখ করতে হবে।
৬। লেখা অবশ্যই বাংলায় হতে হবে। নির্ভূল হতে হবে।
৭। যে কোন লেখা-ই হোক না কেন, তা অবশ্যই ইউনিকোডে (যেমন-অভ্র) টাইপ করে উপরোক্ত ঠিকানায় মেইল করে পাঠাতে হবে।
৮। ধর্মীয় উষ্কানিমূলক ও সাম্প্রদায়ীক সম্পৃতি বিনষ্টকারী কোন লেখা পাঠানো যাবে না এবং তা পোষ্ট করা হবে না।

আমি বাঙ্গালী

-হুসনী মোবারক

আমি বাংলার মানুষ…বাংলা ভালবাসি
বাংলা আমার গান,
বাংলা আমার প্রাণ,
বাংলা সুরে মুগ্ধ আমি
বাজাই বাংলা বাঁশের বাঁশি।।

০৪/৬/২০১৩

মাটির কলাম

-হুসনী মোবারক

শৈশব হতে কৈশোর, অতঃপর
ছুটন্ত যৌবন
একসময় বার্ধক্য,
জরাজীর্ণ; কনকনে পবন,
সময়ের গতিহীন পথচলা
আর অবিরাম
কুড়ে কুড়ে অন্তঃসার শুন্য
মাটির কলাম।

শৈশব, মমতাময়ীর পরম উষ্ণতা
খোলসাবৃত কুসুম
বুবুর জোড়া পায়ের দোলনায়
ছড়া শেখার ধুম,
কানামাছি আর গোল্লাছুটের দলে
কিশোরের প্রথম ছবক
কাদা-পানির মাছ ধরা
ঘরে ফিরে বাবার ধমক।
উদ্দীপ্ত যৌবনের
পিছু না ফেরা মন
টগবগে লোহিত কনিকায়
অফুরন্ত চাওয়ার বাস্তবায়ন।
নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ সময় ফুরায়
স্মৃতির হাত ধরে
প্রহর গুনে যাবার অপেক্ষায়
অনাকাঙ্খিত অন্ধকারে।

সময়ের গতিহীন পথচলায়
আর অবিরাম
মাটির টানে, মাটির কোলে
মাটির কলাম।

১৩/০৩/২০০৪

এত বছর পর!

– হুসনী মোবারক

এত বছর পর ফিরলে তুমি!

রঙ্গীন স্বপ্ন গুলো ধুসর হয়েছে আজ

বিস্তর ব্যবধানে হারিয়েছে পুরনো সে সাজ

কতইনা আবাদ হয়েছে রবিশষ্য ভূমি।

কেনইবা এলে আজ এত বছর পর?

এটাতো তোমারই সাজানো সেই রূপসী বাংলা

একগুচ্ছ অন্ধকারের তমাল সেই পূর্ব বাংলা

ঐ দেখ ডালিম গাছের তলে তোমার দাদির কবর।

সেই তো এলে, কিন্তু এতো বছর পর?

শুকিয়েছে সব হাওড়, নদী, দিঘী আর বিল

এখন আসেনা সারি সারি বক আর গাংচিল

নেই সে নয়ন জুড়িয়ে যাওয়া বিস্তীর্ন প্রান্তর।

হায়, এত বছর পর ফিরলে!

রাখাল গরুর পাল নিয়ে আর যায়না মাঠে

আর তো ভিড়েনা খেয়ার তরী ঐ কাজলা ঘাটে

আম কুড়াতে যায়না আর এখন সব দুষ্টু ছেলে।

কোথায় পাবে আর বাবুই পাখির ঘর?

রাখাল বাজায় না আর মিষ্টি বাঁশির সুর

সবই আজ অতীত, দূর…বহুদূর

কেনইবা এলে তবে এত বছর পর?